কোন পথে জাতীয় পার্টি

নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টিতে অস্থিরতা ততই বাড়ছে। প্রত্যাশিত আসনে অনিশ্চিয়তা, নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত তৃণমূলে না পৌঁছানো, মহাসচিব বদল এবং পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শারীরিক অসুস্থতাসহ নানা কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিচ্ছে বিভ্রান্তি। দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েক নেতার সঙ্গে কথা বলে জাতীয় পার্টির এই পরিস্থিতির কথা জানা যায়।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে হঠাৎ নেতাকর্মীদের কাছে এসে পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, তাকে চিকিৎসার জন্য বাহিরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। তাকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না। এর কয়েক ঘণ্টা পর তার পুরোপুরি বিপরীত বক্তব্য দেন এরশাদের ছোট ভাই জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা।

দলের বনানী কার্যালয়ে সংবিধান সংরক্ষণ দিবসের আলোচনায় জিএম কাদের বলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের উন্নত চিকিৎসায় কোনো বাধা নেই। সুতরাং তার চিকিৎসা নিয়ে ধূম্রজালের কোনো সুযোগ নেই।’ একই অনুষ্ঠানে মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘এটা মনে করার কারণ নেই যে, তিনি (এরশাদ) বড় ধরনের অসুস্থতার মধ্যে রয়েছেন। উনি যখনই মনে করেন অসুস্থতাজনিত কারণে তাকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যেতে হবে, আমরা যাব। সেটি নিয়ে কোনো বাধা নেই।’

পার্টির চেয়ারম্যান এবং অন্য নেতাদের এমন বক্তব্যের বিষয়ে জাপার এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, সম্ভবত দল বড় সংকটে পড়ে গেছে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং অন্য নেতাদের বক্তব্যে মনে হয়েছে জাপা নিজেদের সিদ্ধান্তে চলছে না; মনে হয় বাইরের কেউ পার্টি পরিচালনা করছে।

গতকাল বনানী কার্যালয়ে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আরও বলেছেন, ‘আগের মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারকে আমি ভালোবাসতাম। এই মহাসচিবকে আপনারা ভালোবাসুন। সহায়তা করুন।’ জাপা চেয়ারম্যানের এমন বক্তব্যে মহাসচিব বদলে পার্টির বাইরের কারও ইঙ্গিত আছে কিনা এমন প্রশ্নও ছিল কয়েক নেতার।

গতকাল বনানী কার্যালয় থেকে এরশাদ বের হওয়ার পথে কর্মীরা স্লোগান দেনÑ এরশাদের কিছু হলে, জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে। অ্যাকশন অ্যাকশন ডাইরেক অ্যাকশন। আওয়ামী লীগের দালালরা হুশিয়ার সাবধান। এ সময় এই সেøাগানের প্রতিবাদ না করে বরং হাত উঠিয়ে এরশাদের চলে যাওয়া ইঙ্গিত দেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতি তার অভিমানের দিকে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, এরশাদের চিকিৎসার বিষয়ে আওয়ামী লীগের আপত্তি থাকবে কেন? কেনই বা বাধা দেবে? তার যখন ইচ্ছা তখন তিনি বিদেশ যেতে পারবেন।

এর আগে ২৭ নভেম্বর ফেনীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, এরশাদ রাজনৈতিকভাবে অসুস্থ নন, তিনি সত্যিকারভাবে অসুস্থ। তাকে নিয়ে হাসবেন না। তাকে সিঙ্গাপুরও নেওয়া হতে পারে।

জাপা সূত্র জানায়, এর আগে মনোনয়ন নিয়ে দলে আলোচনা-সমালোচনা ছিল। মনোনয়নবঞ্চিতদের ক্ষোভ ছিল পার্টির সাবেক মহাসচিব রহুল আমিন হাওলাদারের প্রতি। হাওলাদার মনোনয়ন বাণিজ্য করে পার্টির বেহাল অবস্থা করেছেন, এমন অভিযোগে দলীয় কার্যালয়ে এসে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন অনেকে। তাই মনোনয়নবঞ্চিতদের ক্ষোভ চূড়ান্তরূপ ধারণ করার আগেই মহাসচিব বদলের সংবাদ দলে কিছুটা স্বস্তি ফিরিয়ে আনে। তবে গতকাল এরশাদের বক্তব্য এবং জাপার অন্য দুই নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতার বক্তব্যের পর ভবিষ্যতের চিন্তায় নেতাকর্মীরা অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়েছেন। সুত্র : আমাদের সময়